Friday, 29 January 2016

ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহীদের নিয়ে শঙ্কা আ.লীগে

ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহীদের নিয়ে শঙ্কা আ.লীগে
আপডেট: ০২:২০, জানুয়ারি ৩০, ২০১৬ |
     
আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে আওয়ামী লীগ। এ শঙ্কা ভোটের ফলাফল নিয়ে নয়, সম্ভাব্য বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে। কারণ, প্রাথমিক সাংগঠনিক জরিপে এসেছে যে প্রতি ইউনিয়নে গড়ে পাঁচজন করে দলীয় নেতা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে চান। এই অবস্থায় সারা দেশে কতজন বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়ান, এ নিয়ে চিন্তিত দলের নীতিনির্ধারকেরা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী, সম্পাদকমণ্ডলী, কেন্দ্রীয় সদস্য, সাংসদসহ ১০ জনের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁদের আশঙ্কা, দলীয় মনোনয়ন পাওয়া না-পাওয়াকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন বা গ্রামপর্যায়ে দলে অন্তঃকোন্দল ছড়িয়ে পড়লে তার প্রভাব জেলা-উপজেলা ও স্থানীয় সাংসদ হয়ে ওপরের দিকেও পড়তে পারে।
এর আগে গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচন তদারকে নিয়োজিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের এমন একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, পৌর বিদ্রোহী প্রার্থীদের দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু ইউপি নির্বাচনে সেটা করতে গেলে তৃণমূলে সংকট তৈরি হবে। একটা ইউনিয়ন থেকে চার-পাঁচজন নেতাকে বহিষ্কার করলে দল চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। তাই এ নির্বাচনে বিষয়টি সামাল দিতে বিকল্প পন্থা খোঁজা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগামী মার্চে অনুষ্ঠেয় ইউপি নির্বাচনের প্রার্থী বাছাই করার লক্ষ্যে অনেক স্থানে দলীয় ফরম বিতরণ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, দলের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে একটা জরিপ করা হয়েছে। প্রাথমিক এ জরিপে দেখা গেছে, প্রতিটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে গড়ে পাঁচজন করে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন। এ বিষয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়েও মাঠপর্যায়ে খোঁজখবর করা হয়েছে, তাতেও বিদ্রোহী প্রার্থীর সম্ভাব্য যে চিত্র পাওয়া গেছে, সেটাও আওয়ামী লীগ নেতাদের চিন্তায় ফেলেছে।
এই নেতা জানান, এই অবস্থায় ইউপি নির্বাচন দলীয়ভাবে করার বিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কারও কারও আপত্তি আছে। সেটা দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে জানানো হয়েছে। তবে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের অবস্থান দলীয়ভাবে ইউপি নির্বাচন করার পক্ষে। বারবার অবস্থান পরিবর্তন করলে এ নিয়ে সরকারকে সমালোচনায় পড়তে হবে—এই বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত দলীয়ভাবেই নির্বাচনের পক্ষে দলীয় প্রধান মত দেন।
সম্ভাব্য বিদ্রোহী প্রার্থীর বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ওবায়দুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলীয় রাজনীতি করলে দলের সিদ্ধান্ত সবাইকে মানতে হবে। সমস্যা হবে, আবার সমাধানও আছে।’ তিনি মনে করেন, ইউপি নির্বাচন দলকে আরও চাঙা করবে।
এদিকে দলে কোন্দল এড়াতে ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে দলীয় সাংসদদের না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড। এর ফলে সমস্যা আরও বাড়বে বলে মনে করেন কোনো কোনো কেন্দ্রীয় নেতা। তাঁদের মতে, পৌরসভা নির্বাচনে সাংসদদের অনেকে পছন্দের প্রার্থী না পেয়ে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতায় নেমেছিলেন। কেউ কেউ বিদ্রোহীদের মদদ দিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। ইউপি নির্বাচনের ক্ষেত্রেও একই সম্ভাবনা রয়েছে। এ নিয়ে নানা উপদল সৃষ্টি; বিশেষ করে উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাংসদদের অনুসারীদের মধ্যে এ নিয়ে বিরোধ তৈরি হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের দুজন সাংসদ প্রথম আলোকে বলেন, সাংসদেরা জনগণের প্রতিনিধি, আবার দলেরও প্রতিনিধি। সুতরাং তৃণমূলের প্রতিনিধি নির্বাচনে নিজেদের ভূমিকা রাখাটা তাঁদের অধিকার। এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করলে সাংসদের অনুসারীরা অনেক ক্ষেত্রেই হয়তো মেনে নেবেন না।
১০ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া ঠিক করা হয়। তা হলো প্রতিটি ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী বাছাই করে কেন্দ্রে পাঠাবে। কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড তা অনুমোদন দেবে। তৃণমূল কমিটি একক প্রার্থী বাছাই করতে পারলে কেন্দ্রীয় বোর্ড দ্বিমত করবে না। একাধিক প্রার্থী থাকলে সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বোর্ড চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের দুজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, পৌরসভা ও জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে ইউনিয়নের একটা মৌলিক পার্থক্য আছে। অনেক ইউনিয়নে দলীয় পদ-পদবির চেয়ে স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী বংশ, গোষ্ঠী বা এলাকার প্রভাব বড় হয়ে ওঠে। আবার, কোথাও কোথাও লাঠির জোর বা টাকার প্রভাব বেশি কাজ করে। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সব দিকই বিবেচনায় নেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা-বিষয়ক সম্পাদক হাছান মাহমুদ দাবি করেন, পৌরসভার মতো ইউপি নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় প্রত্যাশা করছে। তিনি বলেন, বড় দলে প্রার্থী বাছাই নিয়ে কিছু সমস্যা হতেই পারে, তবে তার সমাধানও হয়ে যাবে।

No comments:

Post a Comment

Registration Form Applicant Name Father's Name Mother's Name Dob ...