বড়দের মতোই কাজ করে ৮৫ শতাংশ শিশু
আপডেট: ০২:২৪, জানুয়ারি ৩০, ২০১৬ |
.দেশের ৮৫ শতাংশ কর্মজীবী শিশু পূর্ণকালীন কাজ করে। যখন তাদের স্কুলে যাওয়ার কথা, তখন তারা বড়দের মতো সকাল-সন্ধ্যা কিংবা পূর্ণ পালায় (আট ঘণ্টা) কাজ করে। এতে বয়সের তুলনায় তাদের অনেক বেশি খাটুনি হয়। দেশে এমন শিশুর সংখ্যা সাড়ে ২৯ লাখ। মজুরি পায় না ১৬ লাখের বেশি শিশু। শুধু থাকা-খাওয়ার বিনিময়ে তারা কাজ করে।
আবার পূর্ণকালীন বা পূর্ণ পালায় কাজ করে পাঁচ বছর কিংবা এর কম বয়সী শিশুরাও। সারা দেশে এমন ‘শ্রমিক’ সোনামণি আছে ১৩ হাজার ৯৫২ জন। অথচ তাদের স্কুলে যাওয়ারই বয়স হয়নি।
শিশুশ্রমের এ চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক সমীক্ষায়। জাতীয় শিশুশ্রম সমীক্ষা ২০১৩ তে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এ মাসের প্রথম সপ্তাহে এ সমীক্ষা প্রকাশ করেছে বিবিএস।
বিবিএসের সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশে এখন সাড়ে ৩৪ লাখ কর্মজীবী শিশু রয়েছে। তাদের মধ্যে ২৯ লাখ ৪৮ হাজার পূর্ণকালীন কাজ করে। বাকি ৫ লাখ ২ হাজার খণ্ডকালীন কাজ করে। এরা পড়াশোনার ফাঁকে কিংবা অবসর সময়ে দৈনিক কমপক্ষে ২ ঘণ্টা কাজ করে।
শিশুদের কাজের ধরনকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো কর্মজীবী শিশু, শিশুশ্রম ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম। এগুলোর আলাদা সংজ্ঞা রয়েছে। কর্মজীবী শিশু বলতে বোঝায়, ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে যারা সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টা পর্যন্ত হালকা পরিশ্রম বা ঝুঁকিহীন কাজ করে। এ শ্রম অনুমোদনযোগ্য। তবে ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী কোনো শিশু যদি কোনো ধরনের ঝুঁকিহীন কাজও করে, তবে সেটা শিশুশ্রম হবে। দেশে এমন শিশু রয়েছে ১৭ লাখ। তারাও কর্মজীবী শিশুদের মধ্যে পড়ে যায়। আর ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী কেউ যদি সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টার বেশি কাজ করে, সেটা ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম হিসেবে স্বীকৃত।
কাজের ধরন: বাংলাদেশের কর্মজীবী শিশুরা কী ধরনের কাজ করে, সেই চিত্র আছে বিবিএসের সমীক্ষায়। সেখানে দেখা গেছে, পূর্ণকালীন কিংবা খণ্ডকালীন কাজের জন্য কৃষি ও উৎপাদন খাতেই প্রায় ৬৫ শতাংশের গন্তব্য। তাদের মধ্যে পৌনে ১৩ লাখ নিয়োজিত আছে কৃষি খাতে, যা মোট কর্মজীবী শিশুদের প্রায় ৩৭ শতাংশ। অন্যদিকে কলকারখানায় কাজ করে সাড়ে ৯ লাখ শিশু। তারা মূলত হালকা প্রকৌশল খাতেই কাজ করে। দোকানপাটে সোয়া ৪ লাখ এবং পরিবহন খাতে দেড় লাখ শিশু কাজ করে। এ ছাড়া নির্মাণ, হোটেল-রেস্তোরাঁ, অফিস সহকারী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দপ্তরি, পিয়নসহ বিভিন্ন খাতে শিশুরা কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।
পড়াশোনা: কর্মজীবী শিশুদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই স্কুলে যায় না। পড়াশোনা না করে তারা সংসারের তাগিদে কাজে নেমে পড়েছে। আগে স্কুলে গেলেও এখন আর যায় না, এমন ২১ লাখ কর্মজীবী শিশু রয়েছে। আর মাত্র ১০ লাখ শিশু পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে কাজ করে।
তবে পৌনে ৩ লাখ শিশু কোনো দিন স্কুলের পথে পা মাড়ানোর সুযোগই পায়নি। সব মিলিয়ে স্কুলে যায় না ২৪ লাখ শিশু। কেন তারা স্কুলে যায়নি—এমন প্রশ্নের উত্তরও খোঁজা হয়েছে বিবিএসের সমীক্ষায়। সমীক্ষা অনুযায়ী, এ কর্মজীবী শিশুদের ৩০ শতাংশই পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করার জন্য স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায়নি। ২৮ শতাংশ শিশুর পরিবারের পক্ষে শিক্ষা ব্যয় বহন করার সামর্থ্য নেই। ২০ শতাংশ পরিবারের সদস্যরাই চাননি, তাঁদের বাচ্চারা স্কুলে যাক। তাঁরা মনে করেন, শিক্ষার দরকার নেই। এ ছাড়া বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব বেশি; গৃহস্থালির কাজ করাসহ বিভিন্ন কারণে স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায়নি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক রুশিদান ইসলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নানা সমস্যার কারণে শিশুরা কাজ করতে বাধ্য হয়। এ সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে। যেমন যেসব পরিবারের শিশুরা কাজ না করলে চলবে না, এমন পরিবারকে আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে ওই শিশু কাজ করতে বাধ্য না হয়। এর পরিবর্তে শিশুকে স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এতে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে উঠবে।
আপডেট: ০২:২৪, জানুয়ারি ৩০, ২০১৬ |
.দেশের ৮৫ শতাংশ কর্মজীবী শিশু পূর্ণকালীন কাজ করে। যখন তাদের স্কুলে যাওয়ার কথা, তখন তারা বড়দের মতো সকাল-সন্ধ্যা কিংবা পূর্ণ পালায় (আট ঘণ্টা) কাজ করে। এতে বয়সের তুলনায় তাদের অনেক বেশি খাটুনি হয়। দেশে এমন শিশুর সংখ্যা সাড়ে ২৯ লাখ। মজুরি পায় না ১৬ লাখের বেশি শিশু। শুধু থাকা-খাওয়ার বিনিময়ে তারা কাজ করে।
আবার পূর্ণকালীন বা পূর্ণ পালায় কাজ করে পাঁচ বছর কিংবা এর কম বয়সী শিশুরাও। সারা দেশে এমন ‘শ্রমিক’ সোনামণি আছে ১৩ হাজার ৯৫২ জন। অথচ তাদের স্কুলে যাওয়ারই বয়স হয়নি।
শিশুশ্রমের এ চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক সমীক্ষায়। জাতীয় শিশুশ্রম সমীক্ষা ২০১৩ তে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এ মাসের প্রথম সপ্তাহে এ সমীক্ষা প্রকাশ করেছে বিবিএস।
বিবিএসের সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশে এখন সাড়ে ৩৪ লাখ কর্মজীবী শিশু রয়েছে। তাদের মধ্যে ২৯ লাখ ৪৮ হাজার পূর্ণকালীন কাজ করে। বাকি ৫ লাখ ২ হাজার খণ্ডকালীন কাজ করে। এরা পড়াশোনার ফাঁকে কিংবা অবসর সময়ে দৈনিক কমপক্ষে ২ ঘণ্টা কাজ করে।
শিশুদের কাজের ধরনকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো কর্মজীবী শিশু, শিশুশ্রম ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম। এগুলোর আলাদা সংজ্ঞা রয়েছে। কর্মজীবী শিশু বলতে বোঝায়, ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে যারা সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টা পর্যন্ত হালকা পরিশ্রম বা ঝুঁকিহীন কাজ করে। এ শ্রম অনুমোদনযোগ্য। তবে ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী কোনো শিশু যদি কোনো ধরনের ঝুঁকিহীন কাজও করে, তবে সেটা শিশুশ্রম হবে। দেশে এমন শিশু রয়েছে ১৭ লাখ। তারাও কর্মজীবী শিশুদের মধ্যে পড়ে যায়। আর ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী কেউ যদি সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টার বেশি কাজ করে, সেটা ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম হিসেবে স্বীকৃত।
কাজের ধরন: বাংলাদেশের কর্মজীবী শিশুরা কী ধরনের কাজ করে, সেই চিত্র আছে বিবিএসের সমীক্ষায়। সেখানে দেখা গেছে, পূর্ণকালীন কিংবা খণ্ডকালীন কাজের জন্য কৃষি ও উৎপাদন খাতেই প্রায় ৬৫ শতাংশের গন্তব্য। তাদের মধ্যে পৌনে ১৩ লাখ নিয়োজিত আছে কৃষি খাতে, যা মোট কর্মজীবী শিশুদের প্রায় ৩৭ শতাংশ। অন্যদিকে কলকারখানায় কাজ করে সাড়ে ৯ লাখ শিশু। তারা মূলত হালকা প্রকৌশল খাতেই কাজ করে। দোকানপাটে সোয়া ৪ লাখ এবং পরিবহন খাতে দেড় লাখ শিশু কাজ করে। এ ছাড়া নির্মাণ, হোটেল-রেস্তোরাঁ, অফিস সহকারী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দপ্তরি, পিয়নসহ বিভিন্ন খাতে শিশুরা কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।
পড়াশোনা: কর্মজীবী শিশুদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই স্কুলে যায় না। পড়াশোনা না করে তারা সংসারের তাগিদে কাজে নেমে পড়েছে। আগে স্কুলে গেলেও এখন আর যায় না, এমন ২১ লাখ কর্মজীবী শিশু রয়েছে। আর মাত্র ১০ লাখ শিশু পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে কাজ করে।
তবে পৌনে ৩ লাখ শিশু কোনো দিন স্কুলের পথে পা মাড়ানোর সুযোগই পায়নি। সব মিলিয়ে স্কুলে যায় না ২৪ লাখ শিশু। কেন তারা স্কুলে যায়নি—এমন প্রশ্নের উত্তরও খোঁজা হয়েছে বিবিএসের সমীক্ষায়। সমীক্ষা অনুযায়ী, এ কর্মজীবী শিশুদের ৩০ শতাংশই পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করার জন্য স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায়নি। ২৮ শতাংশ শিশুর পরিবারের পক্ষে শিক্ষা ব্যয় বহন করার সামর্থ্য নেই। ২০ শতাংশ পরিবারের সদস্যরাই চাননি, তাঁদের বাচ্চারা স্কুলে যাক। তাঁরা মনে করেন, শিক্ষার দরকার নেই। এ ছাড়া বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব বেশি; গৃহস্থালির কাজ করাসহ বিভিন্ন কারণে স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায়নি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক রুশিদান ইসলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নানা সমস্যার কারণে শিশুরা কাজ করতে বাধ্য হয়। এ সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে। যেমন যেসব পরিবারের শিশুরা কাজ না করলে চলবে না, এমন পরিবারকে আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে ওই শিশু কাজ করতে বাধ্য না হয়। এর পরিবর্তে শিশুকে স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এতে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে উঠবে।
No comments:
Post a Comment